বগুড়ায় তিন দিন ধরে স্কুল মাঠে পড়ে থাকা কঙ্কাল প্রায় নাসির মন্ডল (৪৫) নামে এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করে তার জীবন বাঁচিয়েছে পুলিশ। তিনি শহরের মধ্যে পালসা (মন্ডলপাড়া) মৃত মোসলেম উদ্দিনের ছেলে।
শুক্রবার (১৬ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টার সময় উপশহর পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ নাসিরকে পালসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে পাঠায়।
এর আগে স্থানীয়রা নাসিরকে মৃত ভেবে খাটিয়া এনে তিন ঘণ্টা ধরে দাফনের প্রস্তুতি নিতে থাকে। তবে ৯৯৯ এ খবর পেয়ে পুলিশ এসে তার শরীরের পালস দেখে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেখানে চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসার পর বলেছেন নাসির মন্ডল বেঁচে আছেন।
উপশহর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই রহিম রানা জানান, এক সময় নাসির অনেক টাকাওয়ালা ছিল। তবে সময়ের সঙ্গে বিভিন্ন কারণে তার শহরে থাকা প্রায় আড়াই বিঘা জমি বিক্রি করে ফেলে। এ কারণে ৬ মাস আগে তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়।
স্ত্রী চলে যাওয়ার শোকে নাসির সম্পূর্ণভাবে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। শুধুমাত্র জুস খেয়ে তিনি জীবন ধারণ করতেন। একপর্যায়ে নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে নাসির স্থানীয় এক গ্যারেজে থাকা শুরু করেন।
সেখান থেকে তিন দিন আগে তিনি পালসা সরকারি প্রাথমিক স্কুল মাঠে এসে থাকা শুরু করেন। প্রতিবেশীরা তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করলেও তিনি খাবার গ্রহণ করেননি।
শুক্রবার এশার নামাজ পরে তার বোনজামাই সাইদুল মন্ডল তাকে দেখতে আসেন। এ সময় জীর্ণশীর্ণ শরীরে তার কোনো নড়াচড়া ছিল না। পরে স্থানীয়রা তাকে মৃত ভেবে খাটিয়া এনে ধর্মীর রীতিমতো দাফনের কাজের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন।
ওই সময় স্থানীয় এক যুবক ৯৯৯-এ কল করে আমাদের জানায়। পরে আমরা এসে দেখি নাসিরে চোখ খোলা ও কঙ্কাল প্রায় শরীর পড়ে রয়েছে। প্রাথমিক কিছু পরীক্ষা করে বুঝতে পারি তিনি বেঁচে আছেন। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা তাকে শজিমেক হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।
তিনি বলেন, বিষয়টি খুব কষ্টকর যে ৩ ঘণ্টায় মানুষটিকে শত শত উৎসুক জনতার মাঝে কেউ যাচাই করে দেখেনি সে বেঁচে আছে কী না। আমরা না আসলে হয়তো তাকে মৃত ভেবে জীবিত দাফন করত। মূলত ৬ মাস সে কোনো রকম খাবার না খাওয়ায় এই অবস্থা হয়েছে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল ও মিডিয়া মুখপাত্র) ফয়সাল মাহমুদ জানান, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। একজন জীবিত ব্যক্তিকে ৩ ঘণ্টা ধরে মৃত ভেবে ফেলে রাখা হয়েছিল। পরে আমরা জানতে পেরে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়েছি।
বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের ডিউটি ডাক্তার হোসেন আহম্মেদ বলেন, প্রাথমিকভাবে ধকল কাটিয়ে উঠেছেন। এখন বাকিটা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা।